গল্পে গল্পে ধাঁধা-১১|উত্তরসহ দারুণ মজার তিনটি গল্প ধাঁধা| সংগ্রহ ও সম্পাদনা- কামরুল হাসান রিয়াদ| মজার ধাঁধার আসর| মজার মজার সব ধাঁধা
গল্পে গল্পে ধাঁধা-১১|উত্তরসহ দারুণ মজার তিনটি গল্প ধাঁধা| সংগ্রহ ও সম্পাদনা- কামরুল হাসান রিয়াদ
১•
রকিব সাহেব একজন ডাক্তার। তিনি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে তার পোষা কুকুর ছানাগুলো নিয়ে হাঁটতে বের হন। এমনি একদিন সকালে তার বন্ধু জামাল সাহেবের সাথে দেখা। জামাল সাহেব কুকুর ছানাগুলো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার এখানে কয়টা কুকুর ছানা? জামাল সাহেব একজন রহস্যমানব। তার পেশা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রকিব সাহেব কিছুই জানেননা। তাই রকিব সাহেবও রহস্য করে বললেন, আমার ডানে দুইটা, বামে দুইটা, সামনে দুইটা এবং পেছনে দুইটা কুকুর ছানা আছে। এখন তুমি হিসেব করে বলতো কয়টা হল?
জামাল সাহেব উত্তর দিলেন এবং সেটা এক সেকেন্ড এর মধ্যে। এখন আপনাদের বলতে হবে, সেখানে কয়টা কুকুর ছানা ছিল? আর জামাল সাহেব এত দ্রুত কিভাবে উত্তর দিলেন?
২•
সৌরভ এক বছর হলো গ্রিন মাউন্টেন ব্যাংকে জয়েন করে। এই কয় দিনেই ব্যাংকের কর্তাদের বেশ নজরে পড়ে যায়। ও কাজকর্মে বেশ গোছালো কি না।' তারপর মিনিট খানেক কী ভাবলেন। সম্ভবত কী বলবেন গুছিয়ে নিলেন, 'গত মঙ্গলবার ব্যাংকের দরজা সাধারণ লোকদের জন্য খোলার আগে পুলিশ অফিসারের পোশাক পরা একজন লোক ভেতরে ঢুকে। দেখে মনে হচ্ছিল, মোটরসাইকেল নিয়ে ডিউটি করে। কালো চামড়ার জ্যাকেট, বুট, রোদচশমা আর মাথায় চাপানো সাদা হেলমেট। নাম লেখা একটা ব্যাজও সাঁটা ছিল বুকে।'
'সৌরভ সিন্দুক বন্ধ করছে এমন সময় লোকটা পিস্তল বের করে। তারপর ওর গলায় নল ঠেকিয়ে একটা থলের মধ্যে মোট ৯ লাখ টাকা ঢোকাতে বাধ্য করে। '
'ডাকুটা যখন পালাচ্ছে তখন একজন গার্ড রাইফেল তোলে। দেরি না করে দুবার গুলি করে পুলিশের পোশাকে থাকা লোকটা। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায় গার্ড।'
'অল্প সময়ের মধ্যে সৌরভ ভালোমতো দেখারও সুযোগ পায়নি লোকটাকে। যতটুকু বর্ণনা দিতে পেরেছে তাতে বছর ত্রিশেকের যুবক লোকটা। ফরসা গায়ের রং, ছয় ফুটের মতো উচ্চতা আর চোখের রং নীল।'
'এদিন বিকেলেই জোরে গাড়ি চালানোর অপরাধে জয়ন্ত নামের এক লোককে আটক করে পুলিশ। গাড়িতে পাওয়া যায় ডাকাতির ৯ লাখ টাকা। চেহারাও মিলে যায় সৌরভের বর্ণনার সঙ্গে। '
'যখন জানতে পারে কে তার চেহারার বর্ণনা দিয়েছে তখন ডাকাতটা রাগে পাগল হয়ে ওঠে। চেঁচিয়ে দাবি করে এই অপরাধের ঘটনায় তার সহযোগী আর কেউ নয়, আমার ছেলে সৌরভ।'
'আমার ছেলে বলেছে, ডাকাতির আগে কখনো লোকটাকে দেখেনি পর্যন্ত সে। কিন্তু পুলিশ সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার করে তাকে। এক প্রাক্তন ছাত্রের মুখে আপনার অনেক নামডাক শুনেছি। তাই ছুটে এসেছি। আমার ছেলেটাকে বাঁচান বাবা।' চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন ভদ্রলোক।
'দুঃখিত স্যার। আপনার ছেলেকে গরাদের ওপাশেই থাকতে হচ্ছে। আসলেই ডাকাতটার সঙ্গে মিলে লুটের পরিকল্পনাটা করে সে। গার্ডকে গুলি করে মেরে ফেলার পর আর সাহস ধরে রাখতে পারেনি। পুলিশের জেরার মুখে ডাকাতটার চেহারার বর্ণনা দিয়ে দেয়।'
পাঠক, বলুন তো রবিন হাসান কিভাবে বুঝলেন সৌরভ অপরাধী?
৩•
এলাকার নাম হোসেনপুর। একসময় হোসেনপুরের খুব প্রতাপশালী মানুষ ছিলেন জাফর হোসেন। মারা যান প্রায় সাত বছর আগে, কিন্তু রেখে যান অঢেল সম্পদ। টাকা-পয়সা, প্রচুর জমিজমা, ব্যবসা। তাঁর বড় ছেলে এজাজ হোসেন এবং ছোট ছেলে এনামুল হোসেন। সব জমি দুই ভাই সমান ভাগ করে নিলেও গোল বাধে বাজারের পাশের ১০ কাঠার একটা জমি নিয়ে। ভাগাভাগি না করে বড় ভাইয়ের অংশের মূল্য তাঁকে দিয়ে জমিটা রেখে দিতে চান ছোট ভাই এনামুল। এ নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরে মন কষাকষি চলছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে। বাজারের পাশের জমি, ব্যবসা চলবে অনেক ভালো। তাই অংশটুকু ছেড়ে দিতে নারাজ এজাজ হোসেন। তিনি টাকা চান না, চান জমির পাঁচ কাঠা। তবে এনামুল তা দিতে রাজি নন। পুরো জমিতে দোকান তুলে ব্যবসা করতে চান তিনি।
তারপর হঠাৎ করে খুন হয়ে যান এনামুল, লাশ পাওয়া যায় ওই জমিতেই। প্রথমে আমরা সন্দেহ করি এজাজ হোসেনকে। কারণ খুনের দিন সকালে জমির ব্যাপারে কথা বলতে এজাজ গিয়েছিলেন ছোট ভাইয়ের বাড়ি। কিন্তু এনামুল জমি ভাগ করতে রাজি না হওয়ায় প্রচুর ঝগড়া হয় দুজনের মধ্যে। এজাজ হোসেন রাগ করে চলে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যান জমি কিংবা টাকা কোনোটাই নেবেন না। তবে এর জন্য ঠিকই চড়া মূল্য দিতে হবে ভাইকে। আর সেদিন রাতেই খুন হন এনামুল হোসেন।
- জমির জন্য বড় ভাই ছোট ভাইকে খুন করেছে। এতে জটিলতার কী আছে। এ রকম তো প্রায়ই হয়।
- হ্যাঁ, এভাবে কেসটাকে চাপা দিয়ে দেওয়া যেত যদি তৃতীয় পক্ষ এতে যুক্ত না থাকত।
'তৃতীয় পক্ষ!' এবার বেশ অবাক অনন্যা।
- হ্যাঁ, আফজাল চৌধুরী। গ্রামের চেয়ারম্যান তিনি। বেশ বড়লোক, বিশাল দোতলা বাড়িটা বানিয়েছেন শহুরে কেতায়। আরো দুটি প্লট আছে তাঁর। পাশের গ্রামের চিনিকলের অর্ধেকটারও মালিক। বাজারে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। ইলিশের আড়তও আছে। জেটিতে মস্ত বড় বরফের কারখানারও মালিক। ওখান থেকে বরফ এনে বাজারে ইলিশ মজুদ করেন। বেশ বড় ব্যবসা। তাঁর ইচ্ছা বাজারে অনেকটা জমি নিয়ে একসঙ্গে দুটি ব্যবসাই চালাবেন। এ জন্য ওই দশ কাঠা জমির ওপর লোভ ছিল তাঁরও।
- আচ্ছা, এনামুল হোসেন খুন হলেন কিভাবে?
- জেটির পাশেই আছে এখানকার বড় কারখানাগুলো। আর ওখানেই এনামুলের হাঁড়ি-পাতিলের কারখানা। কী যেন সমস্যা হয়েছিল। এক কর্মচারী এসে খবর দিয়ে যায়। তাই দেখতে সেদিন বিকেলে কারখানায় যান তিনি। রাতে আর ফেরেননি। সকালে জমিতে পাওয়া যায় তাঁর লাশ।
- কিভাবে মারা হয়েছে তাঁকে?
- জবাই করে। গলার বেশির ভাগ কাটা ছিল। গায়ের ওপরই রামদাটা ফেলে রেখেছিল খুনি। রামদাটা ছিল এজাজ হোসেনের। রামদায়ে রক্ত থাকলেও আমি নিশ্চিত আরো ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে তাঁর গলা। তবে রামদার রক্তটা ছিল মুরগির। ঘাসেও কোনো চিহ্ন ছিল না। যদি কাজটা বড় ভাই এজাজেরও হয়ে থাকে, রামদা ফেলে রেখে যাওয়ার মতো বোকামি কিভাবে করলেন? আরো বড় কথা। এনামুলের নার্ভগুলো ছিল রক্তে পরিপূর্ণ এবং রক্ত তাতে আগেই জমেছিল।
- চেয়ারম্যানের সঙ্গে এজাজ হোসেনের সম্পর্ক কেমন ছিল?
- ভালো না। ব্যবসায়িক কারণে ঝামেলা লেগে ছিল।
- তাহলে কী এমন হতে পারে না, এজাজ হোসেন খুন করে ফাঁসাতে চাচ্ছেন আফজাল সাহেবকে। ব্যবসায় তাঁর একার রাজত্ব। কিংবা আফজাল চৌধুরী খুন করে ফাঁসাতে চাইছেন এজাজকে। তাহলে জমি পেয়ে যাবেন।
- আসলেই ব্যাপারটা ঘোলাটে পানির মতো। হ্যাঁ ঘোলাটেই বটে। পানি। ইস! এই ব্যাপারটা তো ভেবে দেখিনি। এবার বুঝতে পেরেছি, কে কাজটা করেছে আর কিভাবে করেছে।
- কে করেছে?
- বলছি, বাদাম কিনে নিই আগে।
আনজির, সৌদি কলোনি, বিমান বাহিনী সেনানিবাস, ঢাকা।
পাঠক বলুন তো, খুনটা কে করেছে? হাসান কিভাবেই বা তা বুঝলো?
উত্তর
১• চারটি কুকুর ছানা ছিল। অর্থাৎ রকিব সাহেবের চার পাশে আয়তাকার ক্ষেত্রের মত করে চার কোনায় চারটি কুকুর ছানা ছিল। আর জামাল সাহেব এত দ্রুত উত্তর দিয়েছিলেন; কারন তিনি দেখে বলেছিলেন।
২• পূর্ব পরিচিত না হলে, চোখে রোদ চশমা থাকায় তার চোখের রঙের কথা জানার কথা না।
৩• চেয়ারম্যান বরফের সাহায্যে মেরেছে । তাই গলা কাটলেও রক্ত জমে থাকার কারণে কোনো রক্ত বের হয়নি । আর পানির সাথে বরফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই হাসান বুঝতে পেরেছিল ।
গণিতের মজার ধাঁধা-১
গল্পে গল্পে ধাঁধা-৭| উত্তরসহ পাঁচটি ভীষণ মজার গল্প ধাঁধা
ছন্দে ছন্দে ধাঁধা-৫| উত্তরসহ ১২টি ভীষণ মজার ছন্দের ধাঁধা
গল্পে গল্পে ধাঁধা-৮| উত্তরসহ ৮টি ভীষণ গল্প ধাঁধা
ছন্দে ছন্দে ধাঁধা-৬| উত্তরসহ ১৩টি ভীষণ মজার ছন্দের ধাঁধা
গল্পে গল্পে ধাঁধা-৯| উত্তরসহ ৮টি ভীষণ মজার গল্প ধাঁধা
মজার প্রশ্ন- ৬| উত্তরসহ ১০টি ভীষণ মজার প্রশ্ন
গল্পে গল্পে ধাঁধা-১২| উত্তরসহ ৫টি ভীষণ মজার গল্পের ধাঁধা
গল্পে গল্পে ধাঁধা-১৩| উত্তরসহ ৭টি ভীষণ মজার গল্পের ধাঁধা
মজার প্রশ্ন-১৪| উত্তরসহ ১৫টি ভীষণ মজার প্রশ্ন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন